নেকবর হোসেন : কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু থামছে না। গত ১০ দিনে ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়া উপজেলায় পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে ১০ জন শিশু। তাদের বেশির ভাগই বেড়াতে গিয়ে অভিভাবকের চোখ ফাঁকি দিয়ে খেলতে গিয়ে পানিতে পরে যায়। পরে নিখোঁজ হলে তাদেরকে পুকুর বা জলাশয় থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নিহতদের মধ্যে একই একাধিক শিশুর মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে , তারা একে অপরের নিকটাত্মীয় বা খেলার সাথী।
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচাল আখতারুজ্জামান জানান, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু ঠেকাতে সচতেনতার কোন বিকল্প নেই। কোথাও বেড়াতে গিয়ে অভিভাবকদের খুব বেশি সচেতন থাকতে হবে যেন শিশুরা একা একা খেলতে গিয়ে দৃষ্টির বাইরে চলে না যায়। যেহেতু এই সময়ে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে- আমরা নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শনিবার থেকে প্রতি উপজেলায় সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করবো।
বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গতকাল ৮ আগষ্ট সোমবার দুপুরে ও বিকালে ব্রাহ্মণপাড়া ও বরুড়া উপজেলায় পানিতে দুই শিশু মারা যায়। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষীপাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে লামিয়া আক্তার নামের দেড়বছর বয়েসী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। লামিয়া ওই এলাকার মোরশেদ আলমের মেয়ে। পরিবারের লোকজনের অজান্তে বাড়ির পাশে পুকুরে পড়ে গেলে লোকজন খোঁজাখোঁজি করতে থাকে। পরে তাকে পানিতে ভাসতে দেখে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে একই দিন দুপুর ২টার দিকে কুমিল্লার বরুড়ায় পানিতে ডুবে প্রিয়া দাস নামে ৭ বছর বয়সি এক শিশু মারা গেছে বলে জানা গেছে। এর আগে ৫ আগষ্ট ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ গ্রামে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে ফাইজান নামে ১১ বয়সী এক শিশু প্রাণ হারায়। ২ আগষ্ট বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নে পানিতে ডুবে প্রাণ হারায় ৪ বছর বয়সী ইসমাইল এবং ৬ বছর বয়সী রোজা; তারা দু’জনে মামাতো-ফুপাতো ভাই-বোন। গত ২৮ জুলাই পৃথক ঘটনায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রাণ হারায় তিন শিশু এবং ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় মৃত্যুবরন করে এক জন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের সোনাপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে দুই শিশু। তারা হচ্ছে সোনাপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে আবদুর রহমান ফাওয়ায়েজ (৮) ও একই বাড়ির জালালের ছেলে ফাহমিদ (৮)। তারা দুজন সম্পর্কে চাচাতো ভাই। বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নেমে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তারা সাঁতার জানতো না। একই দিন বিকেলে অপর আরেক ঘটনায় উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের মঞ্জুরি খালে ডুবে তানভীর নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর পর দিনই ২৯ জুলাই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নে তাইয়েবা নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে।
পর পর শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বজন ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কুমিল্লার বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইকবাল আনোয়ার। তিনি বলেন, কুমিল্লায় প্রায়ই পানিতে ডুবে কোমলমতি শিশুদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে; যা খুবই উদ্বেগজনক। এজন্য শিশুর অভিভাবক ও স্বজনদের সতর্ক থাকবে হবে এবং তাদের দিকে নজর রাখতে হবে। শিশুদেরকে পুকুর ডোবা কিংবা জলাশয়ের পাশে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখতে হবে এবং পুকুরে গোসল করতে যাওয়ার সময় অভিভাবকদের পাশে থাকতে হবে।