২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর ভিকটিম খালেদা আক্তারকে ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্বামী মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুর ১২টায় কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক রোজিনা খান এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজু (২৫) হলেন কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শাটিষক গ্রামের নুরুন্নবী প্রকাশ নুর আলম এর ছেলে।
মামলার বিবরণে জানাযায়- ভিকটিম খালেদা আক্তার (২৩) এর সাথে আসামি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজু’র পরিচয় ও সম্পর্কের মাধ্যমে ঘটনার পাঁচ বছর পূর্বে বিবাহ হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে মীম নামের ৩ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর হতেই ভিকটিমের স্বামী মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজু বেকার থাকায় ভিকটিম খালেদা আক্তার তার শিশু সন্তান মীমকে নিয়ে পিত্রালয়ে থাকতো। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর আসামি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজু তাঁর শ্বশুর বাড়ী বেড়াতে আসে। এরপর রাতে স্বামী-স্ত্রী ও শিশু সন্তান ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।পরদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠে গোসল করে ভিকটিম তাঁর স্বামীকে বলে ভিজা পেডি কোট ধৌত করে দেওয়ার জন্য। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি’র একপর্যায়ে আসামি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজু বলেন অনেক সহ্য করেছি আর নয়। এ কথা বলেই আসামি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজু ভিকটিম খালেদা আক্তার এর গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ পুকুর ঘাটের নিকট ফেলিয়া রেখে শ্বশুর বাড়ী হতে দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর সকালে পুকুর ঘাটে ভিকটিমের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে আসামিকে খোজাখুজি করে না পেয়ে নিহতের পিতা কুমিল্লা নাঙ্গলকোট উপজেলার পূর্ব দৈয়ারা’র মৃত আব্দুল আজিজ এর ছেলে মোঃ মোবারক হোসেন (৫৫) বাদী হয়ে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শাটিষক গ্রামের নুরুন্নবী প্রকাশ নুর আলম এর ছেলে মোজাম্মেল হোসেন রাজু (২৫) কে আসামি করে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার বিধানমতে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সোহেল রানা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজুকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করিলে আসামি দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরবর্তীতে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করিয়া আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালের ৩০ জুন সংশ্লিষ্ট ধারায় বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তৎপর মামলাটি বিচারে আসিলে আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠনক্রমে রাষ্ট্র পক্ষে ১৩ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে আসামি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজু’র বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
রায় ঘোষণাকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন রাজু আদালত কাঠগড়ায় অনুপস্থিত ছিলেন।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্র পক্ষের বিজ্ঞ কৌশলী অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোঃ আমিনুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন- আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত উক্ত রায় বহাল রেখে দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন।