কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) উপনির্বাচনে মেয়র পদে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিরামহীন প্রচারণায় ছুটে বেড়াচ্ছেন ৪ প্রার্থী। গতকাল শুক্রবার প্রচারণার দশম দিনেও সকাল থেকেই নিজেদের জানান দিতে ও তারা নগরের উন্নয়নের স্বার্থে নিজেদের ভোট দেওয়ার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন ৯ মার্চ। বিএনপি নির্বাচনে না থাকলেও দলটির দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াই জমে উঠেছে। বিশেষ করে কথার লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না।
উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন- টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী বিএনপি যেতে হিতো দুবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাকু, বাস প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক,ডা. তাহসিন বাহার সূচনা, ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার ও হাতি প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম।
প্রার্থীদের উৎসবমুখর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রচারণায় ভোটারদের মনেও উৎবের আমেজ দেখা যাচ্ছে। এককথায়, উৎসবের এ নগরীতে পরিণত পরি হয়েছে কুমিল্লা নগরী। গত ২৩ তারিখ প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই নগর জুড়ে নির্বাচনী প্রচারসহ ভোটারদের কাছে টানতে সরব হয়ে প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। এরই মধ্যে নগরীর পাড়া-মহল্লা রাস্তাঘাট, অলি-গলি প্রার্থীদের ছবিসংবলিত পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে। নগরীতে প্রার্থী ও তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের লিফলেট বিতরণ ও ও গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভার পাশাপাশি চলছে মাইকিং ও ডিজিটাল প্রচারও। রবিবার (৩ মার্চ )নগরীর সকালে ৭ নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর, রামমালা ও ৮ নং ওয়ার্ডের ঠাকুরপাড়াসহ বিভিন্নএলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকে করেন। গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকে কালে বিপুল সংখ্যক নারী সহ বিভিন্ন পেশা লোকজন ডা. সূচনাকে স্বাগত জানিয়ে বাস প্রতীকের পক্ষে স্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেন ।
এ সময় ডা.তাহসীন বাহার সূচনা বলেন- কথার ফুলঝুড়িতে কুমিল্লার মানুষকে আর ভুলানো যাবে না।কুমিল্লার মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। তারা আমার শিক্ষা, মেধা, যোগ্যতা ও অতীতের কর্মকাণ্ডকে মূল্যায়ন করে “বাস “প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। আমার পিছনে কোন কালো দাগ নেই। কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অপকর্মে জড়িত হইনি। দীর্ঘ সময় ধরে আমি অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করে আসছি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবাধিকতার মাধ্যমে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ কে বিনামূল্যে রক্ত দিয়েছি। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। করোনাকালের কর্মকাণ্ডের জন্য দুইটা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি। একটা থাইল্যান্ড থেকে অপরটি আমেরিকা থেকে। নারীদের জন্য কাজ করে জয়ীতা পুরস্কার পেয়েছি।আপনাদের সমর্থন নিয়ে এ নগরীকে স্বপ্নের মতো করে সাজাতে চাই। এই সিটি করপোরেশন নিয়ে আমার বাবার অনেক স্বপ্ন রয়েছে।তিনি ৩১ বয়সে পৌর সভার দায়িত্ব নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করেছিলেন। তিনি পরিকল্পিত সুন্দর শহর তৈরি করতে সিটি করপোরেশন বানিয়েছেন। প্রয়াত মেয়র রিফাত চাচার মাধ্যমে তিনি এ সিটি করপোরেশন কে সাজাতে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ শুরু করেছিলেন। রিফাত চাচার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চাই। নগর কন্যা হিসেবে কুমিল্লা মহানগরবাসীর পাশে থাকতে চাই।আমাকে ভোট দিলে ঠকবেন না, আপনাদের নিরাশ করব না।
এদিকে,রবিবার (৩ মার্চ) নগরীর সকালে ১৮ নং ওয়ার্ড নুরপুর চৌমুহনী, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগে ও ২৭ নং ওয়ার্ড পাঠানকোট উঠান বৈঠক করেন। রবিবার প্রচারণায় বের হয়ে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে। তারা ভোটের ওপর আস্থা রাখতে চায়। বিএনপি নির্বাচন বিমুখ ছিল। এখন ঘোড়া প্রতীকের সমর্থনে তারা এসেছে মাঠে৷আমি নির্বাচন কমিশনকে বলেছি যেন পূর্বের মামলা নিয়ে তাদের হয়রানি না করা হয়। এবারের ভোট যদি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় তাহলে জনগণের আস্থা পূনরায় ফিরে পাওয়ার একটা চান্স থাকবে।
অপরদিকে রবিবার সকালে নগরীর গোয়াল পট্টি (জিলাপি পট্টি),২৩ নং ওয়ার্ডের জয়পুরে, হালিমা চৌমুহনীতে,গন্ধামতি গণসংযোগ ও ২৪ নং ওয়ার্ডের সালমানপুর মধ্যপাড়া ফরিদ সাহেবের বাড়িতে,২৬ নং ওয়ার্ডের ও ২৭ নং ওয়ার্ডের নোয়াগ্রামে উঠান বৈঠক করেন।রবিবার প্রচারণায় নেমে মনিরুল হক সাক্কু বলেন,বিএনপি আমার সাথে আছে। আমি তৃণমূল রাজনীতি করি। কুমিল্লার মানুষ জানে বিএনপি কারা।
হাতি প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বিভিন্ন এলাকা গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন।
রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন জানান, কুসিক উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কুমিল্লায় একটি উৎসবমুখর সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারব।
কুসিক তথ্যমতে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আয়তন প্রায় ৫৩ দশমিক ৮৪ বর্গ কিলোমিটার। এ সিটিতে ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে, যেখানে ১০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এর আগে এখানে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা নামে দুটি পৌরসভা ছিল। ২০১১ সালের ১০ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশ জারি করে পৌরসভা দুটিকে একটি সিটি করপোরেশনের মর্যাদা দেয়। সিটি করপো করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ১ ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে। ইভিএমের মাধ্যমে ৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে