কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লা দেবীদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ি গ্রামের কৃতি সন্তান মেজর কানিজ ফাতেমা (স্মৃতি)। তিনি শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গোটা নারীসমাজের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
সোমবার সকালে কানিজ ফাতেমার ছোট বোন ফারহানা ইসলাম সূচি জানান- সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ গেল শনিবার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব ফরমেশন কমান্ডারদের উপস্থিতিতে এক অনারম্বরপূর্ণ পরিবেশে, জীবনযুদ্ধে হার না মানা ক্যাপ্টেন কানিজ ফাতেমাকে রেংক ব্যাজ পরিয়ে মেজর পদে পদোন্নতি প্রদান করেন।
২০১১সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণকালে ২০১২সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে যায় এই অকুতোভয় বীর সেনানীর। তবুও দমে যাননি তিনি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কানিজ ফাতেমার অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও উদ্দীপনাকে সম্মান জানিয়ে ৬৯ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের সঙ্গে ২০১৩ সালে বিশেষ বিবেচনায় কমিশন দেয়।
কমিশন লাভ করার পর হুইল চেয়ারের মাধ্যমেই তিনি কর্মজীবনে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে শুরু করেন। আর এই সক্ষমতার পুরষ্কার হিসেবে মেজর পদে পদোন্নতি পেলেন এই নারী কর্মকর্তা।
অসুস্থতাজনিত কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে এই প্রথম বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর কোন নারী কর্মকর্তার মেজর হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দেবীদ্বার উপজেলা ভিংলাবাড়ি গ্রামের মৃত কামাল উদ্দিন সরকার’র ৩ মেয়ে ১ ছেলে (৪সন্তান)’র মধ্যে প্রথম কানিজ ফাতেমা। তিনি ঢাকা সাইন্স ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং কোম্পানিগোন্জ বদিউল আলম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে মাধ্যমিক ও ২০০৮ সালে কোম্পানিগোন্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ’তে ভর্তি হন তিনি।
কানিজ ফাতেমার ছোট বোন ফারহানা ইসলাম সূচি বলেন, ছোটবেলা থেকে বাড়ীর পাশে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ক্যাম্প করা দেখতো এবং তাদের পোশাকের প্রতি ভালোলাগা ছিলো। সময়ের সাথে সাথে আপু যখন বুঝতে পারে সেনাবাহিনীতে চাকুরী করার মাধ্যমে দেশের সেবা করা যায় সেই থেকে আপুর ইচ্ছে সেনাবাহিনীতে চাকুরি করার, যখন আপু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে যান তখন আপুর সুযোগ হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরি করার। প্রশিক্ষনরত অবস্থায় দূর্ঘটনায় আপুর পায়ে হেঁটে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়লে তখন বাবা আপুকে নিয়ে যাওয়া-আসা করতেন। আপু কমিশন লাভ করার কিছুদিনের মধ্যেই বাবার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর আপুই আমাদের সকলের দায়িত্ব নেন। তিনি শুধু আমাদের আপু নন তিনি আমাদের মা সমতুল্য।