রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯ হাজার ৩০০ পরিবারের আনুমানিক ৪৫ হাজার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। আগুনের লেলিহান থেকে রক্ষায় পায়নি ৩ শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দার বসত বাড়ি। এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়েছে। ভস্মিভূত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজারে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসিন।
তিনি ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ৫০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্ধ দেওয়ার কথা বলেন। এছাড়াও স্থানীয়দের জন্য নগদ টাকা, চাউল, তালিকা পাওয়া গেলে ঘর করে দেওয়া হবে বলে জানান।
আন্তর্জাতিক অভিভাবসন সংস্থা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও সাড়ে ৫০০ নারী-পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছে। এ পরিসংখ্যান পরিবর্তন হতে পারে।
এদিকে নিহত ১১ জনের মধ্যে উখিয়ার বালুখালীর ৮-ই একজন। ৮-ডব্লিউ- ৫জন। ক্যাম্প-৯ এ ৫ জন। এদের মধ্যে বশির আহমদ (৭৯) ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগম (৭২), বালুখালী ৯ নম্বর ক্যাম্পের দুই বোন মোশারফা (৩) ও তসলিমা (৪)। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লেগে আনুমানিক ১৫ হাজারের বেশি বাড়িঘরসহ, মসজিদ, ১৩৬ লার্নিং সেন্টার, দোকানপাট, হাসপাতাল ও এনজিওর ভবন পুড়ে গেছে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া ৩ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা পরিবার সকাল থেকে পরিবারসহ পুরনো ঠিকানায় ফিরতে দেখা গেছে। অনেকেই কাঠ, বাস, ত্রিপল দিয়ে নতুন ঘর তৈরির শুরু করেছে।
ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পালংখালী ইউনিয়নের ১, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দার বাড়ি ঘর পুড়ে গেছে এমনটি জানিয়েছেন পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘উগ্র রোহিঙ্গাদের দেওয়া আগুনে পুড়েছে ক্যাম্প। গতকাল আগুন দেওয়ার সময় হাতে-নাতে ছয়জনকে আটক করে ক্যাম্প প্রশাসনকে হস্তান্তর করা হয়।’
স্থানীয় সংরক্ষিত ইউপি সদস্য পারভীন আকতার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের কিছু শুকনো খাবার ছাড়া কোনো ধরনের সহায়তা সামগ্রী দিতে পারিনি। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্থস্ত মৌলভী নুরুল হকের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দেয়া আগুনে সব পুড়ে ছারখার হয়ে হয়ে গেছে। এনজিওগুলো আমাদের সাথে চরম বৈষম্য করছে। গাড়িভর্তি করে সহায়তা সামগ্রী নিয়ে আসলেও আমাদের না দিয়ে সবকিছু রোহিঙ্গাদের দিচ্ছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর ও খাবারসহ সব পুড়ে গেছে। কাল থেকে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করেছি।’
বালুখালী ৯ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা বশির আহমদ জানান, কাল থেকে জিয়াবুল হক নামে তার ৭ বছর বয়সী নাতিকে খুঁজে পাচ্ছে না। সকাল থেকে পানি ছাড়া কিছু জোটেনি।
ক্যাম্প-৯ এর সি ব্লকের সি-৫ এর বাসিন্দা মৌলভী মোস্তাক বলেন, ‘আমার দুইটি দোকান এবং একটি ঘর পুড়ে গেছে। দোকানে অন্তত ২৫ লক্ষ টাকার মালামাল পুড়ে এখন সর্বহারা হয়ে গেছি।’
গতকাল খবর পেয়ে কক্সবাজার, রামু, উখিয়া, টেকনাফের ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট স্থানীয়দের সহায়তায় রাত ১০ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর একে একে বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।