পরপর তিন বছর হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যা না হওয়ায় হাওর অঞ্চলের পাউবো’র প্রকৌশলীদের আত্মবিশ্বাস অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে হাওর অঞ্চলে পিআইসি গঠন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। চলতি বছর ২০১৭ইং সালের মতো আগাম বন্যা হলে পাউবো এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বিপাকে পড়তে পারে। ক্ষুণ্ন হতে পারে পানি সেক্টরের ভাবমূর্তি। হাওর অঞ্চলের প্রকৌশলীদের কাজ-কর্ম নিয়ে বোর্ডের যথাযথ মনিটরিং না থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা কাজ-কর্মে অনেকটা উদাসীনতা দেখাছেন। তাঁদের অনেকেই হাওর অঞ্চলে হানিমুন মেজাজে আছেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্পীড বোটে ঘুরে ঘুরে মোবাইলে সেল্ফি তুলে নায়কোচিত পোজের ছবি পোষ্ট করছেন ফেসবুক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। চলতি মৌসুমের ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ইং তারিখে হাওরের সমস্ত পিআইসি গঠন সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অনেক পিআইসি’র কার্যক্রম শুরুই হয়নি। ২০১৭ইং সালের হাওর বিপর্যয়ে বাঁধগুলো ভেঙ্গেঁ গিয়েছিল এপ্রিল মাসের ৭ তারিখে। সেই হিসেবে পিআইসি সম্পন্ন করার যথেষ্ট সময় হাতে নেই। অথচ সংশ্লিষ্টরা এখনো উদাসীনতা দেখিয়ে যাচ্ছেন। যদিও পাউবো’র প্রকৌশলী এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন পিআইসি গঠন এবং পিআইসি’র কার্যক্রমের ধীরগতির জন্য স্থানীয় এক শ্রেণীর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপকেই দায়ী মনে করেন। এই সমস্ত কথিত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা পিআইসি’র কমিটি গঠন নিয়ে চাঁদাবাজীতে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে যা ইতিমধ্যে দেশের প্রথম সারির একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
অভিজ্ঞমহল মনে করেন, হাওর অঞ্চলে সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে পিআইসি গঠন, পিআইসি মেরামতের কার্যক্রমসহ সকল কাজ তদারকীর প্রয়োজনে নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, মাননীয় উপমন্ত্রী, সম্মানিত সচিব এবং মহাপরিচালক পর্যায়ে হাওর পরিদর্শন করাও জরুরী হয়ে পড়েছে। নচেৎ ২০১৭ইং সালের মতো দুর্যোগ হলে মুখ দেখানোর মতো পরিস্থিতি থাকবে না। হাওরের চরিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, পরপর কয়েক বছর বন্যার প্রকোপ না থাকার পর হঠাৎ আগাম বন্যা হয়ে থাকে। সেই চরিত্র অনুযায়ী চলতি বছর আগাম বন্যার সম্ভাবনা সমধিক।
হাওর অঞ্চলে ফসল উৎপাদন, হাওরের বাসিন্দাদের জীবন মানের উন্নয়ন, পিআইসি কার্যক্রম নিয়ে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই তৎপর। তিনি প্রায়ই এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেন বলে তার অফিস সূত্র জানিয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ও মাননীয় উপমন্ত্রীও এ ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন। এতো কিছুর পরেও পিআইসি কার্যক্রমে কেন জটিলতা দেখা দিয়েছে তা নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সাহেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাওর এলাকার পিআইসি গঠন এবং অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে সারাক্ষণ খোঁজ-খবর নিচ্ছি। হাওর থেকে পানি নামায় বিলম্ব হওয়ায় পিআইসি গঠনে বিলম্ব হয়েছে। তারপরেও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্যে উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম হাওর পরিদর্শন করবেন। আমিও আগামী সপ্তাহে হাওর পরিদর্শনে যাবো। এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমও একই ধরণের মতামত পোষণ করেন এবং তিনিও সহসাই হাওরের পিআইসি বাঁধগুলো পরিদর্শন করবেন।