কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লা বোর্ডে রেজিষ্ট্রেশন করেও ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বসছে না ৫৭ হাজার পরীক্ষার্থী। কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এবছর এসএসসি পরীক্ষার জন্য ২০২২ সালে নবম শ্রেণীতে রেজিষ্ট্রেশনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ২ লাখ ৩১ হাজার ১৩২ জন, কিন্তু দশম শ্রেণীতে এসে পরীক্ষার জন্য ফরম পূরন করে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী। ফরম পূরণের তথ্য থেকে সাধারণ ভাবেই উঠে আসে এক বছরে ৫৭ হাজার পরীক্ষার্থী ছেড়ে গেছে স্কুল কিংবা শিক্ষার পাট চুকিয়ে ঝরে গেছে। এর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। ২০২২ সালে এমন ঝরে পরা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৩৭ হাজার, এবছর এই সংখ্যা বাড়লো ২০ হাজার। এসব শিক্ষার্থী ছাড়াও গত বছরের তুলনায় নিয়মিত- অনিয়মিত মিলে এবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে অন্তত ৪ হাজার।
এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পরা কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার কারণ হিসেবে দু’টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. জামাল নাছের। তিনি জানান, করোনা মহামারিতে পারিবারিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং নির্বাচনি পরীক্ষায়(টেস্ট) উত্তীর্ণ হতে না পারার কারণে এই ঝরে পরার শিক্ষার্থীর হার বাড়ছে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ সহিদুল ইসলাম জানান, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে ৬ জেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করেও পরীক্ষায় বসছে না কিংবা বসতে পারছেন না ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী। এবছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৮৫ হাজার ১০৬ জন। যার মধ্যে অনিয়মিত ১১ হাজার ২৭ জন। ২০২৩ সালে এই বোর্ডের নিয়মিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে নেয়াখালী জেলায় ৩০ হাজার ১৯ জন, ফেণীতে ১৭ হাজার ৩৯ জন, লক্ষীপুরে ১৫ হাজার ৪৯৬ জন, চাঁদপুরে ২৫ হাজার ৮৭৯ জন, কুমিল্লায় ৫৯ হাজার ৬৭৭জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ২৫ হাজার ৯৭০ জন। মোট ১ হাজার ১৭৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ২৭২টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামরির পর অর্থনৈতিক মন্দায় পারিবারিক কারণে অনেকেই ছাড়ছেন পড়াশুনা। এর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। স্কুল ছাড়িয়ে মেয়েদের বিয়ে দেবার প্রবণতা বৃদ্ধি এবং ছেলে শিক্ষার্থীদের আয় রোজগারে পাঠানোর কারণে এই ঝরে পরে শিক্ষার্থীর হার বাড়ছে। অন্যদিকে করোনা মহামারি সময়ে নির্বাচনি পরীক্ষা ব্যতীত এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, এবছর আবারো নির্বাচনি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই আবার নির্বাচনি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে বাদ পড়েছে।
শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো.জামাল নাসের আরো বলেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে বাল্য বিয়ে আর ছেলেদেরে ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানে সংযুক্ত করা – এসব কারণেই এখন অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পরছে। আবার করোনা মহামারির প্রভাবে পরবর্তী সময়ে অনেক শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবেও এখনো প্রস্তুত হতে পারেনি পরীক্ষার জন্য- সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটা বাড়ছে। তারপরও আমরা পরীক্ষার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছি। আশা করছি সবাই সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা দিতে পারবে।