নেকবর হোসেন :কুমিল্লা প্রতিনিধি
পাঁচ বছর প্রেম। তারপর পরিবারের মতে বিয়ে। সুখের জীবনের শুরু মাত্র ১৬ মাসের মাথায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে প্রেমিক। তাও স্ত্রীকে অন্য ছেলের সাথে ভিডিও কলে দেখে। এরআগে আত্মহত্যার কারণ লিখে যান নিজের ডায়েরিতে। শনিবার (২৫ জুন) কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। আত্মহত্যা করা যুবকের নাম কাউছার আলম। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে।
বাবা আবুল কাশেম বলেন, ৫ বছর প্রেমের পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একই গ্রামের লিজা আক্তারের সাথে কাউসার আলমের বিয়ে হয়। তাদের আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। পরে দুই পরিবারের সম্মতিক্রমেই তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাবা হাফিজ মেয়েকে নিয়ে যায়। কয়েক মাস ধরেই সে সেখানে ছিল। লিজার বাবার মূল উদ্দেশ্য ছিল লিজাকে তিনি আর এই বাড়িতে আসতে দিবেন না। যে কারণে তিনি তার মেয়েকে আমার ছেলে থেকে দূরে সরিয়ে নেন। এনিয়ে আমার ছেলে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়।
কয়েকদিন আগে সে নিজেকে দেখতে লিজাদের বাড়িতে লিজাকে দেখতে যায়। কিন্তু সে যখন বাড়িতে যায় লিজাকে এক ছেলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। কষ্টে সে ওই বাড়ি থেকে সেদিন চলে আসে। ওই ছেলের নাম বোরহান। তার বাড়ি আদ্রা ইউনিয়নের কাঁকৈরতলা গ্রামের কাঠালিয়া বাড়ি। আমাদেরকে বিষয়টা জানালে আমরা ওই ছেলের সাথে কথা বলি। বোরহান আমাদেরকে জানায়, ‘সে কথা বলতে চায় না। কিন্তু লিজা তাকে বারবার বিরক্ত করে।
আত্মহত্যার আগে আমার ছেলে এসব ঘটনা তার ডায়েরিতে নিজ হাতে লিখেছে। তারা দু’জন দু’জনকে খুবই পছন্দ করতো প্রথমদিকে। কিন্তু মেয়ের বাবার আমার ছেলেকে পছন্দ না হওয়াতে তিনি তার মেয়েকে দূরে সরিয়ে নেন। শেষদিকে মেয়েও আমার ছেলের সাথে প্রতারণা করেছে। যার কষ্টে আমার ছেলেও আত্মহত্যা করেছে। আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে ঠকিয়েছে। যার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী মেয়ে ও মেয়ের পরিবার।
ডায়েরির পাতায় কাউসার লিখেন ২০জুন রাত ১টা ৩০মিনিটে রবিউল ভাইয়ের সাথে কথা বলি। আমি কথা বলা শেষ হলে ঘরে আসছি। তখন দেখি হাসাহাসি করে লিজা কার সাথে ভিডিও কলে এক ছেরের সাথে জ্বীনা করে। আমি এখন কি করবো! আমার মাথায় কিছু কাজ করে না। কারে কি বুঝাবো। পরে বলবো যে আমি বউ পাইনাই। আমি এসব দেখার পরে আমি মরে যাইতে চাইতেছি। তারপরে নিজেকে বুঝাতে পারিনাই কারণ আমি নিজের চোখে দেখেছি তাই। আমি মান পাইনাই। জীবনের গল্প শেষ করে দিলাম। কারণ হলো যাকে ভালোবাসছি সে আমার সাথে এমন করলো।
আব্বু আমাকে মাপ করে দিয়েন। ভালো থাকবেন। আমার এই জীবনের সবচেয়ে আপন মানুষ আমার বাবা, মা, ভাই, বোন আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। আমাকে যারা বাঁচতে দিলো না তাকে আপনারা ছাড়বেন না। ইতি মৃত মো. কাউছার আলম।
আদ্রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাকিবুল ইসলাম লিমন বলেন, মো. কাউছার আলমের বাড়ি থেকে একটি ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই ডাইরি থেকে বুঝলাম, আমরা তাঁর কাছে ব্যর্থ হয়ে গেলাম। যে ছেলেটা মেয়েটাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে সেই ছেলেটাই মেয়েটার কারণে আজ মারা গেছে। পারিবারিক কলহ মূলত এই ছেলেটার প্রাণ নিয়েছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদে বসেছি। আলোচনা করে দেখছি কি করা যায়। প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, গতকাল একটা ছেলের আত্মহত্যার কথা শুনেছি। তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য নেয়া হয়েছিল। ডাইরির লেখার বিষয়ে তিনি বলেন, ডাইরির বিষয়টি এখনও জানিনা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে আমরা অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এছাড়া পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।