কেবল খেতেই সুস্বাদু নয় মাশরুম, এটি যথেষ্ট উপকারী আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য। মাশরুমের রযেছে প্রচুর পুষ্টি ও উপকারিতা। মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেল, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি খাওয়া যায় বিভিন্নভাবে, ভেজে, সালাদ হিসেবে, সুপ করে বা রান্না করে। আমাদের খাদ্য তালিকায় মাশরুম রাখা উচিত। মাশরুমে থাকা উপাদান ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে ও ওজন কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার হিসেবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর জনপ্রিয়তার কারণ এতে শর্করা ও চর্বি পরিমানে কম এবং তুলনামুলক আঁশ বেশি থাকে। এছাড়া রক্তে চর্বি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং চুল পড়া ও চুল পাকা প্রতিরোধ করে থাকে মাশরুম। অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টি উপাদান মাশরুমে।
কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে মাশরুমে কোলেস্টরেল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টটিন, এনটাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি, সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। এতে আছে উচ্চমাত্রার আঁশ এবং প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম। এছাড়া এতে খুবই কম থাকে সোডিয়ামের পরিমাণ যার ফলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ হৃদপিণ্ডের অন্যান্য কাজেও সহায়তা করে থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
নিয়মিত মাশরুম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ মাশরুম রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার ও মিনারেলে। এগুলো খুবই উপকারী ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য। ফলে নিয়মিত মাশরুম গ্রহণ করলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর কারণ এতে এনজাইম ও প্রাকৃতিক ইনসুলিন থাকে যা চিনিকে ভাঙ্গতে পারে। ফলে অতি সহজে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আছে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
মাশরুমে মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল ও সেলেনিয়াম নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মারাত্মক কিছু রোগ, যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সার থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
এটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কারণ প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে। মাশরুম দারুন কাজ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে। প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো যোগান দেয় আমাদের শরীরের। এতে প্রাকৃতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আর আমরা জানি ভিটামিন, মিনারেলের ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
মাশরুমে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল যা টিউমারের বৃদ্ধিতে বাঁধার সৃষ্টি করে। ফলে টিউমার বৃদ্ধি না পেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা অনেক কম থাকে। কারণ টিউমার ক্যান্সারের বাহক হিসাবে কাজ করে। নিয়মিত মাশরুম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যান্সার আক্রমণ করার সুযোগ পায় না। মাশরুম স্তন ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সারে সারাতে দারুন কাজ করে। বিভিন্ন রকম ক্যান্সার যেমন স্তন এবং প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে মাশরুমের তুলনা নেই।
অ্যানিমিয়া দূর করে
অ্যানিমিয়ার রোগ দেখা দেয় যখন শরীরে আয়রনের অভাব হয়। মাশরুমে যেহেতু প্রচুর পরিমাণ আয়রন আছে, ফলে এটি অ্যানিমিয়া রোগ দূর করতে পারে। তাই আমাদের মাথার যন্ত্রণা, মানসিক অবসাদ এবং হজমের সমস্যা সারাতে মাশরুমের উপকার রয়েছে। তাই নিয়মিত মাশরুম খাদ্য তালিকায় রাখলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে করে
আমরা জানি ফাইবার বা আঁশ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। আর মাশরুমে আছে প্রয়োজনীয় ফাইবার বা আঁশ। তাই অধিক ওজন কমাতে এবং পেশীবহুল শরীরের জন্য মাশরুম খাদ্য তালিকায় রাখুন। ফ্যাট সমৃদ্ধ লাল মাংসের পরিবর্তে নিয়মিত মাশরুম গ্রহণ করলে আমাদের ওজন কমানো সম্ভব।
হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে
মাশরুমের ভুমিকা রয়েছে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে। প্রচুর পরিমাণের ক্যালসিয়াম থাকার কারনে আমাদের হাড় ও দাঁত মজবুত ও শক্ত করে। এছাড়া দারুন কাজ করে শরীরের বিভিন্ন ব্যাথা গাঁটের ব্যথা কমাতে। তাই তো দিনদিন মাশরুম খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ত্বক সুস্থ রাখে
ত্বকের জন্য বেশ উপকারী কারণ মাশরুমে ভিটামিনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাবিন থাকায়। তাছাড়া এর মধ্যে প্রায় ৮০-৯০ ভাগ পানি থাকে বলে ত্বককে নরম ও কোমল রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
হজমে সহায়তা করে
মাশরুমে আছে ফাইবার ও এনজাইম যা হজমে সহায়তা করে। এটি আমাদের অন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার কাজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোলন এর পুষ্টি উপাদান শোষণকেও বাড়তে সাহায্য করে।
রক্তশূন্যতা দূর করে
মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় অ্যানিমিয়ার রোগীদের জন্য এটি আশীর্বাদ স্বরূপ। রক্তে আয়রনের পরিমাণ খুব কমে গেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং যার ফলে মানসিক অবসাদ, মাথার যন্ত্রণা এবং হজমের সমস্যা দেখা দেয়। তাই নিয়মিত মাশরুম খাদ্য তালিকায় রাখলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।