নেকবর হোসেনকুমিল্লা প্রতিনিধি
এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রশ্ন নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এর সঙ্গ জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
আলোচিত প্রশ্নপত্রটি কুমিল্লা বোর্ডের জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও আমাদের প্রতিবেদক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সেটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের।
সারা দেশে রোববার এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়। ঢাকা বোর্ডের ‘কাসালাং’সেটের নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশের ১১ নম্বর প্রশ্ন নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।
কী আছে প্রশ্নে
প্রশ্নের উদ্দীপক অংশে বলা হয়,‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ-বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আবদুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে।
আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নের এই অংশটি পোস্ট করে তা কুমিল্লা বোর্ডের বলে দাবি করা হয়। সংবাদ মাধ্যমেও তা কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্ন উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায়।
কী বলছে কুমিল্লা বোর্ড?
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড.আসাদুজ্জামান বলেন,যে প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে, তা কি গোপন থাকে? শিক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্নপত্র আছে। যে কেউ চাইলে দেখতে পারেন আসলেই কি এমন প্রশ্ন ছিল কি না। শুধু এটুকুই বলব, যা প্রচার হয়েছে তার সঙ্গে কুমিল্লা বোর্ডের কোনো রকম সম্পৃক্ততা নেই।
বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফসর মো.জামাল নাছের বলেন, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, তা ভুল। আমি গতকাল (রোববার) অনুষ্ঠিত বাংলা বিষয়ের প্রশ্ন মাননীয় মন্ত্রী, শিক্ষাসচিব মহোদয়কে পাঠিয়েছি। কারা এমন বিভ্রান্তি ছড়াল, তা আমার বোধগম্য নয়।
অন্যদিকে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন,প্রশ্নটি ঢাকা বোর্ডের।
এইচএসসির বিতর্কিত প্রশ্নটি কুমিল্লা বোর্ডের নয়
ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় রয়েছে আলোচিত প্রশ্নটি
কীভাবে এমন প্রশ্ন এসেছে,তা নিশ্চিত নন জানিয়ে তপন কুমার সরকার বলেন, ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন এটি,তবে অন্য বোর্ডের মাধ্যমে এসেছে। কোন বোর্ড বা কারা কারা এটার সঙ্গে জড়িত ছিল, তা আমরা চিহ্নিত করছি।
তিনি বলেন,আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত করার পর ব্যবস্থা নেব।
শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি বলেছেন,বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের দেশ। দেশে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উস্কানির মতো কিছু থাকবে,তা খুবই দুঃখজনক। এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেছেন,শিক্ষার্থীদের মনে যারা সাম্প্রদায়িক উস্কানির বীজ বপন করতে চায়,তাদের ভবিষ্যতে এসব কাজের সঙ্গে (প্রশ্নপত্র সেটিং-মডারেটিং)আর সম্পৃক্ত করা হবে না। একইসঙ্গে প্রশ্নপত্রে যারা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়েছে,তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (৭ নভেম্বর)রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।