কুমিল্লা প্রতিনিধি
গুরুত্বের ভিত্তিতে কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকবলে সক্ষমতা থাকলেও উদ্ধার কাজে যন্ত্রপাতি ও যানবাহনের আধুনিকায়ন চায় তারা। আবাসিক ও বানিজ্যিক গুরুত্বে এই জেলা স্টেশনটিতে একটি এরিয়াল প্ল্যাটফর্ম লেডার এবং পানিবাহী বিশেষ গাড়ী প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের (বৃহত্তর কুমিল্লা) সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেললাইন, ইপিজেড, অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন হাট-বাজার, ঘনবসতিপূর্ণ সুউচ্চ ভবনের আবাসিক এবং বানিজ্যিক এলাকা এবং কলকারখানা থাকায় নানান দূর্যোগ মোকাবেলা ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। তবে এখনো কুমিল্লার ৬টি উপজেলাতে নেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। নাঙ্গলকোট,লালমাই,তিতাস, দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া ও সদর উপজেলায় এখনো স্থাপিত হয়নি জনগুরুত্বপূর্ণ এই বাহিনীর স্টেশন। আশেপাশের উপজেলা ইউনিটগুলো থেকে সহায়তা নিয়ে এসব উপজেলার দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবেলা করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের (বৃহত্তর কুমিল্লা) সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান জানান, জমি অধিগ্রহনের সমস্যার কারণে কুমিল্লার নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মান কাজ পিছিয়েছে। এখন জমি নিয়ে জটিলতা নিরসন হলেও প্রকল্প সময় কেটে যাওয়ায় আমরা নতুন প্রকল্পের অপেক্ষায় আছি। ৬ উপজেলা ও বাঙ্গরা থানা ফায়ার স্টেশন নির্মানের ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল- ডিপিপি চলমান রয়েছে।
কুমিল্লা জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে,জেলায় ১২টি উপজেলায় ফায়ার স্টেশনের অপারেশনাল কার্যক্রম রয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আরও ১টি থানা ও ৬টি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে। এর মধ্যে মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ফায়ার ষ্টেশনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। শীঘ্রই অপারেশনাল কাযক্রম চালু হবে। তবে জেলা কার্যালয় থেকে সদর উপজেলায় সেবা দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় বিভিন্ন স্টেশনে মোট ৩ শ জন লোকবল এই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস ইউনিটে নিয়োজিত আছেন। তাদের মধ্যে ১৮৬ জন ফায়ার ফাইটার,৩৫ জন নেতৃত্ব প্রদানকারী কর্মকর্তা। এছাড়া ৫০ জন দ্রুত যান চালক ছাড়াও অন্যান্যরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন। বিশেষ ক্ষেত্রে ১২তলা সুউচ্চ ভবন পর্যন্ত অগ্নি নির্বাপন এবং উদ্ধার কার্য সম্পাদনের সক্ষমতা রয়েছে এই জেলা ইউনিটে। আছে বিশেষ লাইটিং ইউনিটও।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের (বৃহত্তর কুমিল্লা) সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান আরও জানান,নিজেদের জীবন বাজি রেখে অন্যের জীবন রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুন লাগার ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মতৎপরতায় ৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকার সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। অগ্নিঝুঁকিসহ যেকোনো দুর্যোগ কমাতে এ বছর জেলায় ৫০টি সরকারি ভবন ও ২৪৫টি বেসরকারি ভবন পরিদর্শন করা হয়েছে। অগ্নিসচেতনতায় ৬০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে,১২০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মহড়া প্রদর্শন এবং ৫৫টি ভবনে সার্ভে করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪৫৫টি স্থানে গণসংযোগ করেছে ফায়ার সার্ভিস।
১০ মাসে ১ হাজার ২২৮টি দুর্ঘটনা :
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১ হাজার ২২৮টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ৪৮৮টি, সড়ক দুর্ঘটনার ৩৪৪টি, ২০টি নৌ- দুর্ঘটনা, চারটি গ্যাস দূর্ঘটনা, দুটি সেফটি ট্যাক ও সুয়ারেজ লাইন দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মোট আরো ৩৭০টি দূর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৬৭জন নিহত হয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩০২জনকে।
এদিকে “দূর্ঘটনা-দূর্যোগ হ্রাস করি,বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ি “এ শ্লোগান নিয়ে কুমিল্লায় পালিত হবে ফায়ার সাপ্তাহ।