বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় বিশ্লেষণমূলক একটি কলাম লিখেছেন বিশ্বখ্যাত গবেষক সি রাজা মোহন। ‘‘ইন্দো-পাক অ্যান্ড ইন্দো-বাংলাদেশ: আ টেল অব টু রিলেশনশিপস’’ শিরোনামের ওই কলামে তিনি ভারত-বাংলাদেশ ও ভারত-পাকিস্তান আন্তঃসম্পর্ক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরেন। পাশাপাশি এই অঞ্চলে উন্নয়নের কারিগর হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সি রাজা মোহন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক।
কলামের শুরুতে সি রাজা মোহন লেখেন, উপমহাদেশের আধুনিক ইতিহাসের এক স্মরণীয় মুহূর্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সপ্তাহে ঢাকা সফর করবেন। ৫০ বছর আগে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। এখানে উদযাপনের পাশাপাশি পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতেও রয়েছে এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশের অতুলনীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সাফল্য শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য দারুণ প্রেরণাদায়ী উদাহরণ। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের দরিদ্র রাষ্ট্রের একটি। তবে চলতি দশক শেষে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ ২৫তম অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার পথে।
কলামে তিনি বলেন, দিল্লির সঙ্গে ঢাকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে গত এক দশকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন। ভারতও এর প্রতিদানে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
তবে পাকিস্তান ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। পাকিস্তান ও ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে গত মাসের শেষের দিকে যুদ্ধবিরতির সমঝোতা নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।
এতে তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া একটি বক্তব্যকে তুলে ধরেন। সম্প্রতি ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি অতীতকে ‘কবর’ দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে অতীতকে ‘কবর’ দেয়া সহজ কথা নয়। জেনারেল বাজওয়ার আহ্বান ভারতে যথেষ্ট সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে করতে ভারত বেশ ক্লান্ত। পাকিস্তানের চিত্রও এর চেয়ে বিশেষ একটা আলাদা নয়।
জেনারেল বাজওয়ার প্রস্তাব পকিস্তানেও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অতীতকে ‘কবর’ দেওয়ার ইস্যুতে পাকিস্তানের কাছেও আছে অভিযোগনামা। দেশটিরও আছে নিজস্ব পথচলার দিকনির্দেশনা। এর সঙ্গে রয়েছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিভক্তির সময় ভারতের ভূমিকার প্রসঙ্গটিও।
ঢাকা ও ইসলামাবাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের কোনো নেতা উপস্থিত থাকছেন না।
অন্যদিকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিচ্ছেদ ও বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ বিষয়ে এ সপ্তাহে লাহোরে এক আন্তর্জাতিক সেমিনার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সরকারের চাপে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করতে হয়েছে আয়োজকদের। লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল।
গত এক দশকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের গুণাগুণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কূটনৈতিক তৎপরতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও উত্তর প্রদেশের রাজ্য সরকারের বাধার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
এল কে আদভানির বিজেপি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে যে পরিকল্পনায় বাদ সেধেছিল, সেই একই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংসদে কাজ করেছে মোদির বিজেপি। বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রবিরোধ নিরসনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
কলামে তিনি লেখেন, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি, আন্তঃসীমান্ত সংযোগ বৃদ্ধি, সন্ত্রাস নিরসনে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক সম্পর্কোন্নয়নে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের সোনালি ক্ষণে নরেন্দ্র মোদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা সেই যুগসন্ধিক্ষণের ঊষালগ্নে অবস্থান করছি। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ উপযোগিতা পাওয়ার জন্য আমাদের এখনো আরো অনেক কিছু করতে হবে।